Breaking News
Loading...
Thursday, January 1, 2015

Info Post
প্রকৃতিতে নতুনের আগমনী সুর। দেখতে দেখতে কালের গর্ভে বিলীন হয়ে গেল ২০১৪ সাল। আসা-যাওয়ার বিরামহীন স্রোতধারা পাড়ি দিয়ে নব বার্তা নিয়ে আসছে ইংরেজী নববর্ষ ২০১৫। পুরাতন বছরের জীর্ণতা আর গ্লানি মুছে নতুন বছর সবার জীবনে বয়ে আনুক অনাবিল সুখ আর শান্তি এই প্রত্যাশা সবার তরে।


স্মৃতি চারণে ২০১৪

প্রাপ্তি আর অপ্রাপ্তির হিসেব নিকেশ গুণতে গুণতে কেটে গেল একটি বছর। আশা নিরাশার কতটুকুই বা পূরণ হয়েছে বিগত ৩৬৫ দিনে। অনেকেই হয়তবা হারিয়ে খুঁজে ফিরেছেন অনেক কিছু, কিন্তু শেষ পর্যন্ত উদ্ধার করা গেল না। ২০১৪ সালটা হয়তবা অনেকের জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় ছিল যা কখনো ভুলে যাবার নয়। অনেকের হয়তবা অনেক কিছু হারানো গিয়েছে আবার হয়েছে অনেক অর্জন। হারানো যা গিয়েছে যাক না তা বিলীন হয়ে, হয়েছে যতটুকু অর্জন তা নিয়েই নতুন করে পথ চলা শুরু করি।

বিগত হয়ে যাওয়া ২০১৪ সালটিতে বাংলাদেশের ইতিহাসে উত্থান পতনের অনেক কিছুই ঘটেছে। সরকার দল তার ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত করেছে আর বিরোধীদল দিয়েছে হরতাল ও অবরোধের মত কঠিন কমর্সূচী। ৫ জানুয়ারির নিবার্চন নিয়ে ঘটেছে অনেক অঘটন। এক দল বলেছে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আর অন্য দল বলেছে ৫ জানুয়ারির নিবার্চনের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের মৃত্যু হয়েছে। আসলে তাদের কাররই মৃত্যু হয়নি। মূলত রাজনীতির রসানলে পড়ে মৃত্যু হয়েছে সাধারণ মানুষের। ককটেল ও প্রেট্রোল বোমার আঘাতে পুঙ্গু হতে হয়েছে অনেক সাধারণ মানুষকে। তার পরেও কি থেমে আছে পাল্টা পাল্টি রাজনীতির অপতৎপরতা। কবে এই পাল্টা পাল্টি রাজনীতির জঘন্যতম অপতৎপরতার অবসান হবে কে জানে?

বছর শুরু হয়েছিল হরতাল দিয়ে আর শেষও হচ্ছে হরতাল দিয়ে। আবার নতুন বছরটিও শুরু হবে হরতাল দিয়ে। বাহ! ভালোই তো হরতালে হরতালে বছর পার। অনেকেই বলছে হরতালের যু্ক্তিকতা আছে আবার অনেকেই বলছে ইস্যু বিহীন হরতাল দিচ্ছে বিরধীদল। বুঝতেই পারছেন উদার পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে।

শিক্ষা ক্ষেত্রে ২০১৪ সালটি এ+ দিয়ে ভতির্ থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে হট্টোগোল লেগেই ছিল। দলা দলি আর নিজেদের মধ্যকার অন্র্তদ্বন্দ্বে প্রাণ হারিয়েছে অনেক শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স না পেয়ে ২য় বার পরীক্ষা দেবার সুযোগ হারাতে হচ্ছে অনেক শিক্ষার্থীকে। আরেকটি কথা ২০১৪ সালের পুরো বছরটাই ছিল প্রশ্ন ফাঁসের ছড়াছড়ি। ফটোকপির দোকন ও ফেসবুকে মিলেছে হুবুহু প্রশ্নপত্র। শিক্ষার মান নিয়ে যত প্রশ্ন জমা হয়েছে তা আগামী বছরগুলোতে কতটুকু দূরীভূত হবে তা নিয়ে শংকার শেষ নেই।

২০১৪ সালটাতে ক্রীড়া ক্ষেত্রে আমরা ব্যাপক সফলতা পেয়েছি। বছরের শেষ প্রান্তে এসে জিম্বাবুয়ে দলকে টেস্ট ও ওডিআই দুই ফর্মেটেই বাংলাওয়াশ করে বেশ উজ্জিবিত টাইগাররা। এখন স্বপ্ন নতুন বছরে বিশ্বকাপ ক্রিকেটে ভাল খেলার।

ইংরেজী সাল আমাদের দেশে এলো যেভাবেঃ

গ্রেট ব্রিটেনে এই গ্রেগরীয়ান ক্যালেন্ডার প্রচলিত হয় ১৭৫৬ খ্রিস্টাব্দে। এই ক্যালেন্ডার আমাদের দেশে নিয়ে আসে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে।
গ্রেগরীয়ান ক্যালেন্ডারের আগে নাম ছিল জুলিয়ান ক্যালেন্ডার। খ্রিস্টপূর্ব ৪৬ অব্দে রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজার মিসর দেশে প্রচলিত ক্যালেন্ডারটি রোমে এনে তার কিছুটা সংস্কার করে তাঁর রোম সাম্রাজ্যে চালু করেন। এই ক্যালেন্ডারে জুলিয়াস সিজারের নামে জুলাই মাসের নামকরণ করা হয়। মিসরীয়রা বর্ষ গণনা করত ৩৬৫ দিনে। মিসরীয়দের ক্যালেন্ডার সংস্কার করে জুলিয়াস সিজার যে ক্যালেন্ডার রোমে প্রবর্তন করলেন তাতে বছর হলো ৩শ
সাড়ে পঁয়ষট্টি দিনে। এখানে উলেস্নখ্য যে, মিসরীয় ক্যালেন্ডার পরীৰা-নিরীৰা করে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বলেছেন এই ক্যালেন্ডারের প্রবর্তন করা হয় খ্রিস্টপূর্ব ৪২৩৬ অব্দে।
গ্রিকরা মিসর থেকে ক্যালেন্ডারের ব্যবহার রপ্ত করে। রোমানরা গ্রিকদের নিকট থেকে এটা রপ্ত করে সংস্কারের মাধ্যমে। রোমানদের প্রাচীন ক্যালেন্ডারে নাম ছিল দশটি। তারা বর্ষ গণনা করত ৩০৪ দিনে। মধ্য শীতকালের ৬০ দিন তারা গণনায় আনত না। তাদের বছরের প্রথম মাস ছিল মার্চ। ১ মার্চ তারা নববর্ষ উৎসব পালন করত। শীতকালের ৬০ দিন গণনায় না আনার কারণে বর্ষ গণানায় যে দুটো মাসের কমতি হতো তা পূরণ করতে তাদের অনির্দিষ্ট দিন সমূহের দ্বারস্থ হতে হতো। এই সব দুর্বোধ্যতা ও জটিলতার কারণে সাধারণ জনগণের মধ্যে তখন ক্যালেন্ডার ব্যবহারের প্রবণতা একেবারেই ছিল না।
রোমের উপাখ্যান খ্যাত প্রথম সম্রাট রোমুলাসই ৭৩৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দে রোমান ক্যালেন্ডার চালু করবার উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। এই রোমুলাসই ৭৫৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ইতালির টাইবার নদীর তীরে রোম নগরী প্রতিষ্ঠা করেন এবং তাঁরই নামে রোমের নামকরণ করা হয়।
পরবর্তীকালে রোমান সম্রাট নূমা বছরের মাসগুলোকে সঠিক বিন্যাসের লৰ্যে প্রচলিত ১০ মাসের সঙ্গে জানুয়ারি ও ফেব্রম্নয়ারি নামে আরও দুটো মাস যুক্ত করেন। জানুয়ারি মাসকে বছরের প্রথম মাস হিসেবে এবং ফেব্রম্নয়ারি মাসকে বছরের শেষ মাস হিসেবে স্থাপন করা হয়। জানুয়ারি মাসকে ধার্য করা হয় ২৯ দিনে এবং ফেব্রম্নয়ারি মাস ২৮ দিনে। এ ছাড়াও তিনি মারসিডানাস নামে অতিরিক্ত একটি মাসেরও প্রবর্তন করেন।
জুলিয়ান ক্যালেন্ডার চলছিল। কিন্তু ডাইওনিসিয়াম এঙ্গুিয়াস নামের এক খ্রিস্টান পাদ্রি যিশুখ্রিস্টের জন্মের বছর থেকে গণনা করে ৫৩২ অব্দ থেকে খ্রিস্টাব্দের সূচনা করেন। ১৫৮২ খ্রিস্টাব্দে রোমের পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরী জ্যোতির্বিজ্ঞানীগণের পরামর্শ নিয়ে ক্যালেন্ডারটির কিছুটা সংস্কার করেন। তাঁর নির্দেশে ১৫৮২ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর মাসের ৫ তারিখকে ১৫ তারিখ ধরা হয়। তিনি ঘোষণা করেন যে সব শতবর্ষীয় সন ৪০০ দ্বারা বিভক্ত হবে সেই সব শতবর্ষ লিপইয়ার বলে গণ্য হবে।
ইংরেজী সনের জানুয়ারি মাসের নামকরণ করা হয়েছে দ্বাররৰী দেবতা জানুসের নামে, রণদেবতা মারস বা মারফের নামে মার্চ মাসের নামকরণ করা হয়েছে, দেবরাজ জুপিটারের পত্নী জুনোর নামে নামকরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া জুলিয়াস সিজারের নামে যেমন জুলাই মাসের নাম হয়েছে তেমনি সম্রাট অগাস্টারের নামে হয়েছে অগাস্ট বা আগস্ট মাস।
পৃথিবীর বেশ কিছু দেশ আছে যেখানে সেই দেশের অভ্যনত্মরে ইংরেজী ক্যালেন্ডারের ব্যবহার নেই। সেসব দেশে যার যার নিজস্ব ক্যালেন্ডার বা পঞ্জিকা ব্যবহৃত হয়। অবশ্য আনত্মর্জাতিক যোগাযোগ ও কাজকর্মের খাতিরে ইংরেজী তারিখ প্রযোজনের তাকিদে ব্যবহৃত হয়।
সব মিলিয়ে বিদায়ী বছরটি ছিল বৈচিত্র্যময়। অতীত পেছনে ফেলে সামনে নতুন বছর। এখন নতুন বছর ও নতুন সূর্যের অপেক্ষায় সবাই। নতুন বছরে সকলের কাছে আমার প্রত্যাশা, আসুন পুরনো বছরের হিংসা, বিদ্বেষ, শত্রুতা সব ভুলে গিয়ে নতুন বছরে নিজেকে নতুন করে গড়ে তুলি। পুরনো বছরের পাপগুলো মনে মনে হিসেব করে মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই। আর নতুন বছরটিতে পুরনো পাপগুলো পুণরায় না করার দৃঢ় সংকল্প করি। মনে রাখি, সংকল্পই আমার মাঝে পরিবর্তন আনবে।

হে আল্লাহ! তুমি আমাদের জানা, অজানা, প্রত্যক্ষ, পরোক্ষ -সব ধরনের পাপ ক্ষমা করে দাও। নতুন বছরটিতে আমাদের নতুন উদ্দমে একসাথে মিলেমিশে কাজ করার শক্তি দাও। আমীন।
পুরাতন বছরের সমস্ত দুঃখ, কষ্ট ও গ্লানির দাগ ধুয়ে মুছে যাক সবার জীবন থেকে এই প্রত্যাশায় সবাইকে জানাই নতুন বছরের প্রানঢালা উষ্ণ শুভেচ্ছা।
শুভ ইংরেজী নববর্ষ ২০১৫ শুভ হোক ২০১৫ সাল সবার।


0 মন্তব্য(গুলি):

Post a Comment